সিলেট, ২৩ সেপ্টেম্বর : ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এ টি এম তুরাব হত্যা মামলার ৬নং আসামি সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপনকে (৪৩) গ্রেফতার করেছে বিজিবি’র টাস্কফোর্স। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে হবিগঞ্জের মাধবপুরের গোপীনাথপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ.কে.এম. ফয়সাল আটক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মঈন উদ্দিন গোপীনাথপুর (মাস্টারবাড়ি) গ্রামের ইমাম উদ্দিনের ছেলে।
জানা যায়, গোপন সূত্রে ৫৫ বিজিবি’র সহকারী পরিচালক মো. ইয়ার হোসেন জানতে পারেন- গোপীনাথপুররস্থ (মাস্টারবাড়ি) মঈন উদ্দিনের বাড়িতে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে বিজিবি’র টাস্কফোর্স সোমবার ভোররাতে সেখানে অভিযান চালায়। এসময় কোনো অস্ত্র পাওয়া না গেলেও ওসি মঈন উদ্দিনকে পেয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সিলেভিউ-কে বলেন- ৫ আগস্টের পর সিলেট কোতোয়ালি থানা থেকে মঈনকে ওএসডি করে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করে রাখা হয়। তবে তিনি বাড়িতে কী করছিলেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই সিলেট মহানগরের বন্দরবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক এটিএম তুরাব। ঘটনার এক মাস পর নিহতের ভাই আবুল আহসান মো. আযরফ (জাবুর) বাদী হয়ে ১৯ আগস্ট সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। এজাহারে আসামি হিসেবে পুলিশসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে।
মামলার ২ নম্বর আসামি হলেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউসার, ৩ নম্বর আসামি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, ৪ নম্বর আসামি সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মিজানুর রহমান ও ৬ নাম্বার আসামি সেসময়ের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন।
অন্য আসামিরা হলেন- সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামী, থানার সদ্য সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) ফজলুর রহমান, থানার এসআই কাজি রিপন সরকার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফতাব উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পিযূষ কান্তি দে, সিলেট সিটি করপোরেশনের পিআরও সাজলু লস্কর, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সিসিকের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক, নগরের চালিবন্দর নেহার মঞ্জিলের বাসিন্দা শিবলু আহমদ (মো. রুহুল আমিন), এসএমপির কনস্টেবল সেলিম মিয়া, আজহার ও ফিরোজ।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মদদপুষ্ট আওয়ামী লীগ দুর্বৃত্তরা ও অবৈধ সরকারের অপেশাদার পুলিশ ও দুর্বৃত্ত দ্বারা ন্যাক্কারজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। আসামিরা সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে একজোট হয়ে বাদীর নিরপরাধ ছোট ভাই সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাবকে (এটিএম তুরাব) হত্যা করা হয়। দিন দুপুরে শত শত মানুষের সামনে উক্ত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে ২ থেকে ৫ নম্বর আসামি বাদীকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে আসামিরা রাষ্ট্রীয় প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাদীকে ঢাকায় নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করান।
অপরদিকে, ঘটনার পাঁচ দিন পর তুরাবের পরিবারের পক্ষ থেকে ৮-১০ জন পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তবে সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ।
পুলিশ ওই সময় জানায়- আগেই তাদের পক্ষ থেকে বিএনপি ও জামায়াতের ৩৪ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকশকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। তাই তুরাবের ভাইয়ের দায়ের করা অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে রেকর্ড করেছে তারা।
তবে পরবর্তীতে জানা যায়, পুলিশের এজাহারে গুলিতে মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখই নেই। এছাড়া পুলিশের এই মামলা ১ মাস পর্যন্ত কাউকে করেনি তারা। তাই বাধ্য হয়ে তুরাবের পরিবারকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan